বিল্লাল হোসেন প্রান্ত॥
জনমত জরিপ। নির্বাচনী রিপোর্টিং এ গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষনীয় বিষয়। আমেরিকান ইলেকশনে এর প্রবণতা থাকে। সেখানে প্রভাবশালী মিডিয়া নিজস্ব জরিপ এর ভিত্তিতে রিপোর্ট প্রকাশ করে। জনপ্রিয়তার মাত্রা সম্পর্কে ধারনা প্রকাশ করতে জনমত রিপোর্টিং একটি স্বীকৃত প্রক্রিয়া। বিশ্বে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক পরিপ সম্পন্ন হয়ে থাকে ব্যাপারে পেশাদারি সংস্থার মাধ্যমে। সংবাদমাধ্যমে তার হাইলাইট ফোকাস করে থাকে।
জনমত জরিপ-গবেষনা প্রক্রিয়াভুক্ত। যার পদ্ধতির জনমত পরিপ শতকার হারে জনসমর্থনকে বিজ্ঞাপিত করে। সৃষ্ট জনসমর্থনের উপর গবেষনাপত্র, যা জনসমর্থনের পর্যায় সরণি, যার সূচক জনধারনার গড়পড়তা অবস্থান। যা জনসমর্থনের অবস্থা, গতিপ্রকৃতি ও পরিমান সম্পর্কে একটা আভাষ।
নীতি নির্ধারক বা পলিসি মেকাবরা জনমত বিশ্লেষণ করেন। এটি সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বশর্ত। এটি জনমত বিকাশে প্রনোদনা। সম্ভাব্য ফলাফলের উপর আগাম ধারনা-যা গবেষনা প্রসূত।
জনমত জরিপকারীর উপস্থাপনা, তিনি যে প্রক্রিয়ায় বা যে পয়েন্টে তার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তার প্রক্রিয়াজাত করেন এবং তার সারাংস গড়পড়তা সূচক ও তারতম্য দিয়ে প্রকাশ করেন।
জনমত জরিপ গ্রহন, বর্জন বা প্রত্যাখ্যানের বিষয় নয়। এটি একটা উপস্থাপনা যা গুরুত্বপূর্ণ। একটা দ্রষ্টব্য। জনমত হচ্ছে-বস্তুনিষ্ট ভবিষ্যৎবাণী। জনমত হচ্ছে আয় না। এটি প্রতিচ্ছবি।
যত সহজে জনমত সম্পর্কে সহমত বা ভিন্নমত পোষন কেউ কেউ করনে ততটাই কঠিন জনমত বিকাশ। জনমত বৈজ্ঞানিক, গাণিত্যিক ও তথ্য প্রযুক্তির সাথে মনস্তাত্বিক ও যোগাযোগ, ব্যবস্থাপনার সমন্বিত প্রক্রিয়া।
আবহমান কাল ধরেই মানুষ জানতে চায়- ১. কী অবস্থা ২. অবস্থান কী ৩. কী হতে যাচ্ছে ? সুতরাং জনমত গুরুত্বপূর্ণ-এটি শুধু নিছক একটি অনুমান নয়। জনমত স্বত:স্ফূর্ত। এটি প্রকাশিত হয় প্রচারিত হয় না। প্রচার মাধ্যম একে কাচামালে হিসাবে প্রচার বা ব্যবহার করে। কনসাল্টেন্টরা একে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত হিসেবে।
জনমত সমর্থকদের সুসংহত করে। বিপরীত অবস্থানের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। মা তাকেও আপগ্রেড হতে প্রেরণা দেয়।
নির্বাচনী রিপোটিং কালে জনমত থাকে স্পর্শকাতর অবস্থায়। জনমত সংবেদশীল। জনমতের অবস্থান জানা ও জানানো এ সময়ে প্রয়োজন। কেননা, মানুষ ব্যক্তিধারনাকে পারিপাশ্বির্ক ও সামষ্টিক ধারনার নির্যাস থেকে দেখে।
বিশ্ব নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রচারণা- এখন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ স্বীকৃত কৌশল। নির্বাচনে তাই দলগুলো রণ কৌশল নির্ধারণ করে। গবেষনা ও প্রচার কৌশল সেল থাকে।
শুধু গোড়া সমর্থক এক্ষেত্রে যেহেতু কোন কাজেই লাগে না-সুতরাং কোন ব্যক্তিগত বা ব্যক্তি বিশেষের মতামতের কোন প্রভাব নেই।
জনমত আর প্রপোগন্ডাকে যারা গফিস বলে ধরে নেয়-তারা জনমত এর মুর্খ। অন্ধসমর্থক জনমত বিকাল করে, কিন্তু জনমত তাকে তাড়া করে। উদ্ভ্রান্ত করে।
জনমত হচ্ছে তা যেখানে আপনার ও একটি মত আছে। পরিকল্পনা মন্ত্রাণালয়ে একটি শ্লোগান বা প্রতিপাদ্য লেখা হয় পরিকল্পনা যেখানে আপনার ও একটা স্বপ্ন আছে।
বাংলাদেশ হলো অন্ধ ভক্তদের দেশ। এখানে সচেতনতা বাড়ছে কিন্তু তা নির্ধারিত স্ট্যান্ডর্ড এ পৌছায় নি।
সামাজি মাধ্যম জনমত প্রকাশ, বিকাশ করে। কিন্তু সেখানে কারো সমর্থনে সমর্থকসূচক মন্তব্য সেটি জনমত হিসাবে গ্রাহ্য নাও হতে পারে। কেননা-সেখানে ব্যক্তিগত অনেকাংশেই আবেগ বা বিদ্বেষ প্রসূত।
এই মাধ্যমের পোস্ট বা টেটাস প্রচার কাজে প্রসার সঞ্চারক হতে পারে, কিন্তু এসব মন্তব্যের কোন কার্যকারিতা থাকে না। যিনি লিখেন তার তাৎক্ষনিক মন্তব্য, জনান্তিকের উদ্দেশ্যে স্বগত সংলাপ। কখনোতা উম্মদনা বা উত্তেজনা বা উত্তাপ ছড়ায় কিন্তু তা দ্রুতই কোন রকম ফলাফল ছাড়াই নিরূত্তাপ হয়ে যায়।
পত্রিকার জনমত রিপোর্টকে তাই সামাজিক মাধ্যমে উপহাস করা অর্থহীন। এটি নিচু মানের বাজে প্রয়াস। সামাজিক মাধ্যমে বসে প্রতিকাকে আক্রমন করা পন্ডশ্রম। যারা এটি করে তারা মনোবিকার গ্রস্থ সাইকো। অসুস্থ মনমানসিকতার। উম্মাদ। এ ধরনের মন্তব্য যার বিপক্ষে যায়-তাতে কিছু যায় আসে না। উদ্ভট মন্তব্যকারী থখন সামাজিক মাধ্যমে অসামাজিক কাজ করেছেন বলে চিহ্নিত ও ধিক্কৃত হন। অশালীণ বা শিষ্টচার বহির্ভূত মন্তব্য দিয়ে কারো পক্ষে-বিপক্ষে জনমত পড়া যায় না। বরং যার পক্ষে এই দালালী করা হয়-তা ততাটাই নগ্ন যে-মানুষ একে করুনা করে। আর সর্বোপরি-এ ধরনের হীন, উদ্ভট, অশালীন মন্তব্য যার জন্য করা হয় মূলত: তাকেই ছোট করা হয়। এধরনের বল্গাহীন মন্তব্যের দায় দায়িত্ব তার উপরই বর্তায় যিনি নি¤œমানের মন্তব্যকারীকে তার ফেসবুক ক্যাম্পেইনে যুক্ত রাখেন এবং সমর্থন বা এ্যালাউ করেন।
নির্বাচনকালীন পূর্বাপর জনমত জরিপ সংক্রান্ত রিপোর্ট ভবিষ্যৎবাণী নয়; এটি কোন ব্যক্তিকে প্রমোশন বা ব্র্যন্ডিংও করে না।
মার্কিন নির্বাচনে প্রায় সমস্ত জনমত রিপোর্টকে ভুল প্রমাণিত করে-ট্রাম্প বিজয়ী হন। তবে দুয়েকটি রিপোর্ট সত্য প্রমাণিত হয়।
এবার ‘ফের নিউজ’ সামাজিক মাধ্যমে অপ্রতিরোধ্য ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে অভিযোগ উঠে। ফেসবুকে কর্তৃপক্ষ ফেক নিউজ নিয়ন্ত্রনের ফর্মুলা আবিষ্কারের কথা ও উপায় নিয়ে ভাবেন।
বাংলাদেশেও একাদশ নির্বাচনে সামাজিক মাধ্যম এর প্রচারনার প্রভাব এবাপর দেখা যাবে। তরুন প্রজন্ম প্রচার যুদ্ধে এ মাধ্যমে সক্রিয় থাকবেন। সেক্ষেত্রে পত্রিকার ক্লিপ বা কাটিংসই কবে ভিত্তি। আবার অনলাইনে ‘ফেক নিউজ।’ বাজারজাত হচ্ছে। সেটিও কাজে লাগানো হবে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, পত্রিকার রিপোর্ট এর জন্য পত্রিকা বা সাংবাদিককে হাটুর নীচে কামড় দিতে হবে। তা বাজে দৃষ্টান্ত হিসাবেই প্রত্যাখ্যান হবে। বরং তথ্য প্রযুক্তি আইনে তা দন্ডনীয় অপরাধযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।
জনসমর্থন বিভিন্ন প্রশ্ন বা সূচকে প্রকাশিত হয়। সামগ্রিক সূচকের অবস্থান, ভূমিকার উপর আস্থা পছন্দ বা অসন্তোষ, বা মনোভাব এর উপর যারা দৈবচয়নে মতামত ব্যক্ত করেন তাদের গড় অবস্থানকেই জনমত জরিপ হিসাবে ধরা হয়। সুতরাং যারা জনমত বুঝে না, যারা জনমত ভীত, বা জনমত অজ্ঞ তাদের আধুনিক ও সমকালীন নির্বাচন প্রচারনায় যুক্ত থাকার অর্থই হয় না।