জনমত ডেক্স ॥
ময়মনসিংহ স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মাসুমের উপর নৃশংস হামলার ঘটনার নেপথ্য কাহিনী এবার ভিন্ন রূপ নিয়েছে। একটি ভিডিও চিত্র এবার কথা বলছে অন্যরকম। যেখানে আগ্নেআস্ত্র ও বস্তা ভর্তি ধারালো রাম দা সহ সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে হামলার শিকার শেখ মাসুমকেই। ঘটনাটি ঘটেছে মাসুমের উপর হামলার ঠিক ১ দিন আগে ৩১ অক্টোবর। এ বিষয়ে ২টি জিডি হলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। বাঘমারা সংলগ্ন রেলের জমিতে মাসুম বাহিনীর সশস্ত্র তান্ডবের মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১ নভেম্বর পার্ক এলাকায় দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মাসুমকে গুরুতর আহত করে। বিশেষজ্ঞ মতে, সেদিনের ঘটনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে মাসুম গং হতো আসামি। তাহলে পরবর্তি ঘটনাটি নাও ঘটতে পারতো।
এদিকে ৪ নভেম্বর মাসুমের উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়। জানা যায়, মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়। সূত্র জানায়, মামলায় ১ নং আসামি করা হয়- মহানগর যুবলীগ নেতা রাসেল পাঠানকে। মহানগর যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক রাসেল পাঠানকে প্রধান আসামি করায় এ নিয়েও তাৎক্ষনিক ভাবে তার সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন উঠেছে, রাসেল কেন আসামি?
পুরো ঘটনায় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাব বলয়ের উর্ধে উঠে সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার করতে হবে। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাস বন্ধ না করলে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলবে।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ যুগ্ম আহবায়ক শেখ মাসুমের উপর হামলার ঘটনায় মহানগর যুবলীগ যুগ্ম আহবায়ক রাসেল পাঠানকে আসামি করার মধ্য দিয়ে সরকার দলীয় গ্রুপগুলোর মধ্যেকার অন্তদ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিলো। তবে সূত্রমতে এ হামলা মামলার ঘটনাটিতে রাজনৈতিক নয়। রয়েছে লুটতরাজ ও ব্যাক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়।
এদিকে, এই হামলা ও মামলার ঘটনা নিয়ে শহরজুড়ে চলছে তোলপাড়। চলছে নানা জল্পনা কল্পনা প্রশ্ন। উভয় বিষয়েই চলছে ধূ¤্রজাল। প্রকৃত ঘটনা যা নিয়ে রহস্য ও নানা জল্পনা কল্পনা চলছিল তা ফাঁস হয়েছে একটি ভিডিও চিত্রে।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, মাসুমের উপর হামলা ও রাসেল পাঠানের বিরুদ্ধে মামলার নেপথ্যে রয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হতে শুরু করেছে একটি ভিডিও। ঘটনা সম্পর্কে যেমন দৃশ্যমান পরিস্থিতি প্রকাশ পাচ্ছে। তেমনি ঘটনায় জড়িতদের স্বরূপও প্রকাশ পাচ্ছে বলে নিরপেক্ষ সূত্রগুলো থেকে বলাবলি চলছে। ভিডিও ফুটেজটি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যাচ্ছে- গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যার পর পার্কে মাসুমের উপর দুর্বৃত্তরা হামলা করলেও এ নিয়ে বিগত ৩/৪ দিন ধরেই চলছিল উত্তেজনা। ময়মনসিংহ ষ্টেশনের দক্ষিনে বাঘমারা সংলগ্ন পরিত্যক্ত রেল লাইনে বগি কাটার কাজে বাধা দিয়ে চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। ৩১ অক্টোবর মাসুমের নেতৃত্বে সেখানে সন্ত্রাসীরা মহড়া চালায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জিআরপি থানায় একাধিক জিডি পর্যন্ত হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অবশ্য ওই ২টি জিডি হয়েছিল মাসুমের বিরুদ্ধেই।
ঘটনার পেছনে রয়েছে ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশনে পরিত্যক্ত রেলের বগি কাটার সরকারী টেন্ডারএর কাজে চাঁদা দাবির বিষয়ে। মাসুমের নেতৃত্বে চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাস এর ঘটনার পাল্টা ঘটনা হচ্ছে তার উপর হামলা।
জনৈক ঠিকাদার শানু মিয়া ও রাসেল পাঠান টেন্ডারের সাব কন্ট্রাক্টর হিসাবে কাজটি করাচ্ছিলেন বলে জানা যায়। স্টেশনের দক্ষিণপূর্বে পরিত্যক্ত ১৩৫টি মালবাহী বগি নিলামে দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় করেন খুলনার ঠিকাদার শানু মিয়া।
চলমান সেই কাজে গত ৩১ অক্টোবর বেলা ২ টার দিকে বাঘমারা গেইট দিয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে ওয়াগন কাটা মিস্ত্রী মহিদুল (৪০) সহ কয়েকজন আহত হয়। সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে তান্ডবলীলা চালিয়ে ১০ অক্সিজেন সিলিন্ডার, ১০ টি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, ৮ টি কাটার সেট, ও দামী রেঞ্জ সহ লোহার প্লেট লুটপাট করে। এ ব্যাপারে শানু মিয়া ও জিআর পি পুলিশ পৃথক পৃথক ২ টি জিডি করে।
সেদিন হামলা লুটপাটের ঘটনার সময় সিসিটিভিতে ধারণ করা ছবিতে দুর্বৃত্তদের তান্ডব ধরা পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের দাবি সিসিটিভি ফুটেজে ধারণকৃত ছবিতে মাসুম ওই সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাটে নেতৃত্ব দেন। ভিডিওচিত্রও সেকথাই বলে।
এদিকে, রাসেল পাঠানকে মামলার মূল আসামি করায় তার ঘনিষ্টমহল দাবি করেন- রাসেল পাঠান কোন ভাবেই হামলায় জড়িত না বা অংশ নেননি। ফলে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে মহলটি দাবি করে।