বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
রাজনীতিতে আদর্শ। আদর্শের পথে চলা। সে পথে জীবন উৎসর্গ করে দেয়া নেতারা ইতিহাস। তাদের পাথেও বলা হয় রাজনীতিতে। সে ইতিহাস রোমাঞ্চিত করে আগামীর আদর্শবান রাজনীতিককে। গড়ে উঠে ইতিহাস রচনার উত্তরসুরী হিসাবে। সেদিক থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির উর্বর ভূমি হিসাবে ময়মনসিংহকে সারা দেশে এক অনবদ্য স্থান বলাই যায়। ইতিহাসও এমটাই বলে। কারণ ময়মনসিংহে জন্ম নিয়েছেন এদেশের ইতিহাসে অবদান রাখা অনেক বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব। যাদের আদর্শিক পদচারণায় ময়মনসিংহ থেকে রাজনৈতিক দিকপাল রচিত হয়েছে কোন পথে বাংলাদেশ।
ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন ভূইয়া,প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোঃ শামসুল হক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক ও সফল সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যারা প্রয়াত। বেঁচে আছেন তাদেরই সারথি জীবন্ত কিংবদন্তি সাবেক সফল ধর্মমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। আওয়ামী লীগে দীর্ঘ ৬২ বছরের রাজনৈতিক পথচলায় আজও অটুট দলীর আদর্শের বাতাবরণে। একচুল অনড় জাতির পিতার আদর্শিকতায়। আজও গর্জে উঠেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ম্যানড্যাট বাস্তবায়নে। দলীয় সকল কাজে আজও নিরলশভাবে কাজ করে যাওয়াটাই অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদর্শন। যা করতে তিনি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন মনেপ্রাণে।
আওয়ামী লীগ জন্মের ৯ বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুর ছায়াতলে এ দলে যোগ দেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। দীর্ঘ ৬২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগ বিরোধীদের দ্বারা নির্মম শারীরিক মানসিক নির্যাতন সহ্য করেছেন তিনি। সহ্য করেননি বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত। সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছেন অনড়ভাবে।
ওয়ান ইলিভেনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আটক থাকা অবস্থায় নতুন সমঝোতার ডাকে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিউটে সমাবেশ হয়। সেখানে ময়মনসিংহের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন,”শেখ হাসিনাকে মাইনাস করে কোন সমঝোতা নিয়ে কেউ ভালুকা পার হয়ে ময়মনসিংহ পা রাখলে তাদের মাথায় কল্লা থাকবে না।” এভাবে আওয়ামী লীগের সকল দুঃসময়ে গর্জে উঠেছেন তিনি। শত নির্যাতন অত্যাচার সহ্যে করে ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে এজনপদের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ সদর আসনের ভোট ব্যাংক চরাঞ্চলের প্রতিটি মাটিতে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের পদচারণা আজও জনমুখর। চরাঞ্চলের মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ মানেই অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের দূর্গ। যা তিনি গত ৬২ বছরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫ জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনে বিজয়ী দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। ১২ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ৬ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বে গঠিত তৃতীয় মন্ত্রীসভায় অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে সফলতার নজির রেখে দায়িত্ব পালন করেন।
মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ঢাকা হল বর্তমানে ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সাংগঠনিক জীবনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান দুইবার ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ১৪৯ (ময়মনসিংহ-৪) আসন থেকে ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তিনি জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম সংসদে তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ি কমিটি’র সভাপতি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র সম্মানিত সদস্য, জাতীয় সার সমন্বয় ও বিতরণ কমিটি’র সদস্য, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া তিনি ১৯৯৬ সনে একবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার এবং ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরপর তিনবার সিন্ডিকেট মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকে মোট তিনবার ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মতিউর রহমান রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে কারাবরণ করেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সন পর্যন্ত দুই মেয়াদে দীর্ঘ ২৩ মাস কারাবরণ করেন। তিনি ২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেন। শতপ্রলোভনের মুখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি অবিচল থেকে তিনি তাঁর সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অকৃত্রিম অবদানের জন্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ‘মুজিব দর্শন বাস্তবায়ন পরিষদ’ কর্তৃক ২০০০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পদক’ লাভ করেন।