বিল্লাল হোসেন প্রান্ত ॥
‘অন্তর খুশি হয়ে গেছে। আইজ থেইক্যা আমাগর কান্দা কমছে। ওহন বাকি আজরাইল গুলাইনের বিচার দেখতাম আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি’। কিছুটা প্রশান্ত মনে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়নের জয় বাংলা বাজারে নির্মভাবে হত্যার শিকার নিহত কাশেমের ছোট বোন শিরিন আক্তার (২৫)।
শনিবার ১২ মে বিকেলে চর ভবানীপুর গ্রামে নিহত কাশেমের বাড়িতে তদন্তকালে ডিবি ওসি আশিকুর রহমানকে পেয়ে স্বজনরা কান্নাজড়িত কন্ঠে পুলিশের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এ কথাগুলো বলেন।
শিরিন আক্তার বলেন, “পুলিশ ভাইদের প্রতি আমরা অনেক খুশি। তারা আমরগ মতোন গরীব অসহায় মাইনসের পাশে আছে”।
১২ মে গভীর রাতে চরাঞ্চলের কৃষক কাশেম হত্যা মামলার অন্যতমম আসামী আলমগীর ডিবি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবরে এলাকাবাসীসহ নিহত কাশেমের বোন শিরিন আক্তারের এই সন্তুষ্টি প্রকাশ।
ডিবি পুলিশ মামলা তদন্ত পাওয়ার পরই ওসি আশিকুরের নির্দেশনায় এসআই পরিমল দাস পিপিএমসহ ডিবি পুলিশের এজটি চৌকস টিম পুলিশ হেড কোয়াটার্স এলআইসি শাখার সার্বিক সহায়তায় আলমগীরকে গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে গ্রেফতার করতে সম হয়।
নিহত কাশেমের মা জোবেদা খাতুন(৭০) পুলিশ সদস্যদের দেখেই বাড়ির উঠনে ধান ফেলে ছুটে আসেন। হাত তুলে দোয়া করে বলেন, “বাবা তোমাগরে আল্লায় বালা করবো”। ততণে বুকের ধন হারানোর আত্মচিৎকার হয়ে ঘোমটার আড়াল থেকে চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে তার।
অন্যদিকে পিতৃহারা দুটি কন্যা সন্তানকে নিয়ে দিকভ্রান্ত কাশেমের স্ত্রী জোবেদা (৩০) ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় পুলিশের দিকে।
এর আগে নিহত কাশেমের বাড়িতে যাবার আগে চরভবানীপুর কড়াইতলি বাজারে পুলিশের সাথে কথা হয় চরসিরতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আহবায়ক মোশারফ হোসেন সহ সাধারণ জনগনের সাথে।
মোশারফ হোসেন বলেন, গতকালের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি চরাঞ্চলবাসীর আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ আরও বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। প্রমান হয়েছে আইনের উর্ধে কেউ নয়।
মোশারফ বলেন পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত আলমগীর কাশেম হত্যা মামলার একজন অন্যতম আসামি। সে কাশেমকে হত্যার সময় তার বুকে পা দিয়ে পারা দেয় এবং বাশ দিয়ে ডলা দেয়। তিনি বলেন এদের একটি চক্র আছে যারা এ এলাকায় ডলারের অবৈধ ব্যবসার করতো। তারা মানুষকে এখানে এনে টর্চারিং করে সব কিছু রেখে এই কড়াইতলিতে ছেড়ে দিয়ে যেতো। এদের অত্যাচারে এ এলাকার মানুষ সব সময় ভয়ে আতংকিত থাকতো।
তিনি বলেন কাশেম হত্যাকান্ডে জড়িত আরও অনেকের নাম মামলায় আসেনি। তিনি দাবি করেন মামলাটি এখন যেহেতু ডিবি পুলিশের তদন্তে এসেছে বাকি জড়িতদের নাম মামলায় অন্তর্ভূক্ত হবে।
উল্লেখ্য গত ২ এপ্রিল প্রকাশ্যে দিবালোকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরভবানীপুরের কৃষক কাশেমকে বর্বরোচিত নির্যাচন চালিয়ে হত্যা করে এলাকার চিহিৃত সন্ত্রাসীরা। এ ঘনায় কোতোয়ালী থানায় ১৪৩,১৪৮,১৪৯,৩২৩, ও ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা রুজু হয়। মামলা নং ১৬। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান এবং নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যেকোন মূল্যে হত্যাকান্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ সুপার নিহত কৃষক কাশেমের অসহায় পরিবারের আহাজারী ও আর্তনাদে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি কথা দেন কাশের হত্যার বিচার হবে।
এরপরই পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম মামলাটির অধিকতর সুক্ষ তদন্তের জন্য গত ৮ মে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেন। এর ৩ দিনের মাথায় হত্যাকন্ডে জড়িত অন্যতম আসামি আলমগীরকে গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এবং ১২ মে গভীর রাতে তাকে নিয়ে জয় বাংলা বাজারে অভিযান পরিচালনাকালে অন্যান্য সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপর গুলি বর্ষণ করে। এ সময় আলমগীর পালাতে গেলে ক্রস ফায়ারে নিহত হন। এঘটনায় আরও অজ্ঞাত ১০/১২ জনের নামে সরকারী কাজে বাধার ও গুলি বর্ষনের দায়ে মামলা দায়ের করেছে ডিবি পুলিশ।
তারই জের ধরে ডিবি পুলিশের ১২ মে বিকালে চরভবানীপুরে তদন্তকালে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ওসি আশিকুর রহমান বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে কাশেম হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য সকল আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন অপরাধীরা যতই শক্তিশালী হউক কেউই আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।