বিল্লাল হোসেন প্রান্ত \
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের অস্তিত্বের অংশ। বাঙ্গালি জাতির গর্বের স্থান। প্রাপ্তির ঠিকানা। কবি গুরু রবি ঠাকুরের একান্ত সহচর রবীন্দ্রসঙ্গীতের ¯^রলিপিকার অসংখ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত সৃষ্টির নেপথ্যের জনক শৈলজারঞ্জন মজুমদারের উপর নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন’।
চয়নিকার প্রযোজনায় নির্মিত বাংলাদেশ এবং ভারতে চিত্রায়িত ‘রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন’ চলচিত্রের গবেষণা, পান্ডুলিপি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় রয়েছেন ময়মনসিংহ নেত্রকোণার কৃতি সন্তান এস বি বিপ্লব। যার প্রাক মুক্তি আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের গুনি ব্যক্তিবর্গ। রবীন্দ্রসঙ্গীতগুরু শৈলজারঞ্জন মজুমদার এর জন্মস্থান নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জের বাহাম গ্রামকে কেন্দ্র করে এ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। যার নির্মানকাল ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ।
২৮ জুলাই শনিবার দিনব্যাপী ৪ পর্বে চলে রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের প্রাক মুক্তি অনুষ্ঠানমালা। সকাল ৯ টায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন, বিকাল ৪ টায় টাউনহলে এড. তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে ভারত থেকে আগত অতিথিদের নাগরিক সংবর্ধনা, বিকাল ৫ টা ৪৫ মিনিটে প্রাক মুক্তি আলোচনা এবং সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।
‘রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন’ প্রাক মুক্তি আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সচিব সাজ্জাদুল হাসান। তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একান্ত সহচর শৈলজারঞ্জন মজুমদারের সাথে তার মরহুম পিতা ডা. আখলাকুর রহমান ও তার পরিবারের নিবিড় সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, অবিভক্ত বাংলার নেত্রকোণা মহকুমার বর্তমান নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী বাহাম গ্রাম তার কৃতি সন্তান শৈলজারঞ্জনকে নিয়ে গর্বিত। যিনি গ্রামটিকে শান্তিনিকেতনের সাথে তুলনা করেছিলেন। সচিব সাজ্জাদুল হাসান স্মরন করেন ৭৫এ বাহাম গ্রামের পথ ধরে হাটছিলেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার। সেখানেই প্রথম দেখা হয় মরহুম ডা. আখলাকুর রহমানের সাথে। কথা হয়। তৈরি হয় হৃদ্রতা। এক সময় শৈলজারঞ্জন আসলেন ডা. আখলাকুর রহমানের বাসায়। সেখানে সেই বাড়িটিতে বসে শৈলজারঞ্জন বলেছিলেন, আমি এখানে শান্তিনিকেতনের গন্ধ পাচ্ছি।
সাজ্জাদুল হাসান বলেন, এভাবেই তৈরি হয় শৈলজারঞ্জনের সাথে আমাদের পারিবারিক বন্ধন। তিনি অসুস্থ হলে বাবাকে একবার যেতে বলেছিলেন। এবং একটি পত্র লিখেছিলেন। যা বর্তমানে শৈলজারঞ্জনের স্মৃতিচিহ্ন।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে বাহাম গ্রামে শৈলজারঞ্জন স্মরনে কিছু একটা করার উদ্যোগ নেন আমার বড় ভাই। আমরা চিন্তুা করছি ওই এলাকায় শৈলজারঞ্জন মজুমদারের জন্মস্থান বাহাম গ্রামে একটা কিছু করার। সেখানে বসবাসরত লোকজনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে জমি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বাহাম গ্রামে শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র, গবেষনাকেন্দ্র করার ব্যবস্থা হতে পারে বলেনও জানান।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ‘রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ও চয়নিকার প্রতিষ্ঠাতা এস বি বিপ্লব। তিনি বলেন, সঙ্গীতগুরু আচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের সুরের প্রতি তার টান ছিল অনন্যসাধারণ। শান্তিনিকেতন থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণ পেয়ে কবিগুরুর প্রত্যক্ষ সাহচর্য পাওয়ার দুরন্ত বাসনায় ১৯৩২ সালে বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন। রবি ঠাকুর এবং তার সংগীত হয়ে উঠে শৈলজারঞ্জনের জীবনের ধ্রæবতারা। তার জীবন ও কর্মকে ঘিরে দুই বাংলায় গৃহিত ¯^াক্ষাৎকার ও প্রামাণ্য সংগ্রহের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় নিয়ে সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে ‘রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের কাজ।
অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদ হাসান সভাপতিত্বে করেন। সাংবাদিক কবি ¯^াধীন চৌধুরী ও রুবিনা আজাদ এর উপস্থাপনায় আরও বক্তব্য রাখেন ভারত থেকে আগত অতিথি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ¯^পন কুমার দত্ত, লন্ডনে প্রথম বাংলা টিভির প্রতিষ্ঠাতা ড. সুধীর কুমার ঘোষ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত ভবন সহ অধ্যাপক ড. সুরজিত রায়, দুরদর্শন ও আকাশবাণীর বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী ও উপস্থাপক নিবেদিতা নাগ তহবিলদার। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগ ড. অসিত রায়।
ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ সাধারণ সম্পাদক ইয়াজদানী কোরায়শী এর সমš^য়ে ৪ পর্বের এ অনুষ্ঠানমালায় ময়মনসিংহের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রশাসনিক, নাগরিক, সামজিকসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।