বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। নেই ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র। সিটি করপোরেশনের নকশা যেখানে অকার্যকর। উঠে গেছে ১৪ তলা ভবন। ইমারত নির্মাণ নীতিমালা সম্পূর্নরূপে উপেক্ষা করে নগরীর জেলা স্কুল মোড়ে একটি শিক্ষক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন এ বহুতল ভবণ। নানা অনিয়মের প্রেক্ষিতে মসিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সম্প্রতি ভবনের কাজ বন্ধ করে দেন। তবে সরজমিনে দেখা যা কোনরূপ অনুমতি ছাড়াই ফের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে ভবন কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও মসিক নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার কথা থাকলেও ফের কি করে কাজ চলছে সেটি তারা অবগত নয়। তবে এ বিষয়ে ভবন মালিকদের নেতৃত্বে থাকা ফুলপুর বওলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন খান বলেন, সিটি মেয়রের মৌখিক অনুমতিক্রমে কাজ চলছে। নিয়মনীতি বর্হিভূতভাবে বিল্ডিং কোড অমান্য করে ভবনটি গড়ে তুলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শহরের কোন বিল্ডিংই নিয়মের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেনি। সেক্ষেত্রে তাদের বিল্ডিংয়েও কিছু অনিয়ম হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বিষয়টি নিয়ে নিউজ না করার কথা বলেন অনুসন্ধানকারী সাংবাদিকদের।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে মসিক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার সুযোগে ভবন সিন্ডিকেট নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভবণের কাজ দ্রুতগতিতে সেরে ফেলছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ফ্লাট বিক্রি করে এর কয়েকজন মালিক তাদের হাত গুটিয়ে নিয়েছেন বলেও সূত্র জানায়। প্রশ্ন উঠেছে বিল্ডিং কোড অমান্য করে গড়ে উঠা এই বহুতল ভবনে কোনরূপ দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নিবে?
ইমারত নির্মাণের পূর্বে নকশা অনুমোদন করে থাকে সিটি করপোরেশন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী নকশা অনুমোদন হলেও বাস্তবে সে নিয়ম কার্যকর হচ্ছে কি না তা দেখার কেউ নেই! কেউ অনিয়ম করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এক্ষেত্রে নির্বাক। যার প্রভাব পড়ছে সাধারণ জনগণের উপর। সড়কের পাশে গড়ে উঠা এ ১৪ তলা ভবন ভূমিকম্প বা যেকোন দুর্যোগে পতিত হলে স্থানীয় জনগণ ভয়ংকর ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে আশংকা রয়েছে বিশেষজ্ঞ মহলে। মন্তব্য রয়েছে ভবনের ৫৬ টি ফ্লাটে থাকা কয়েকশ মানুষ ও আশপাশের মানুষজনের প্রাণসংশয়ে রয়েছে অনিয়মে গড়ে উঠা ভবনকে ঘিরে। যা হতে পারে রানা প্লাজার নামান্তর।
সূত্র জানায়, ১৪ তলা বিশিষ্ট এ ভবনটির কাজ শুরু হয় পৌরসভা থাকাকালীন। এক্ষেত্রে পৌর এলাকায় ৭ তলার বেশি উচ্চতায় বিল্ডিং নির্মাণের সুযোগ না থাকলেও সিটি করপোরেশন এলাকায় দায়িত্বশীল সংস্থার অনুমতি সাপেক্ষে বহুতল ভবন নির্মাণের নিয়ম রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, ভবনটি ১০ শতাংশ জমির উপর তৈরির প্রস্তাবনায় নকশা অনুমোদন দেয় সিটি করপোরেশন। তবে বিভিন্ন জটিলতায় একাধিকবার জমি জরিপে সরজমিনে ১২ শতাংশ জমি পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্র নকশা বর্হিভূত জমি রয়েছে দুই শতাংশ। যা অনুমোদনকৃত নকশার সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
অভিযোগ রয়েছে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবনের সম্মুখ অংশে ৫ ফুট, অন্য তিন দিকে ৩ ফুট করে জমি খালি রেখে ভবন নির্মানের নিয়ম থাকলেও তা সম্পূর্ণ দখল করেই করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানা যায়। এছাড়া বিল্ডিংয়ের বেশিরভাগ ফ্লাট মালিকরা তাদের অংশ বিক্রি করে মূনাফা হাতিয়ে নিতে কম খরচে নিন্মমানের উপাদান ব্যবহার করে ভবনটি নির্মাণ করছে বলেও সূত্রে জানা গেছে।
৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিয়াজ মুর্শেদ বলেন, বিল্ডিংটির নির্মাণকাজ নিয়ে অনেকেই আমার কাছেও অভিযোগ করেছে। তবে সিটি করপোরেশন এর কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বলে আমি জানি। পুনরায় কাজ করার অনুমোদন দেয়া হয়নি। বহুতল ভবন নির্মাণে স্থানীয় কাউন্সিলরের অনাপত্তিপত্রের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এমন কোন অনাপত্তিপত্র দেননি বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি সিটি মেয়রের সাথে কথা বলবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। ইতিমধ্যে বেশকিছু অনিয়মের দায়ে বিল্ডিংটির কাজ বন্ধ করে জরিমানাও করেছে সিটি করপোরেশন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ নিয়ে সিটি মেয়রের সাথে কথা বলে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবো। অনিয়মের প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মিহির লাল সরদার বলেন, অভিযুক্ত ভবনটির অনুকূলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। বরং নানা অনিয়মের কারণে এর বিরুদ্ধে অনুপযোগী বা অযোগ্য প্রতিবেদন দাখিল হতে পারে বলে তিনি জানান। একইভাবে বহুতল ভবন নির্মাণে উপযোগিতার ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের যে ছাড়পত্র দেয়া হয় তা এখানে নেগেটিভ হতে পারে বলে জানান, ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ সাজেদুল কবির জোয়ারদার। কারণ অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন গং ভবনটি নির্মানে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন পেতে আবেদন করেন। তবে পরিদর্শন কমিটির সম্মুখে নকশার লেআউট উপস্থিত করতে না পারায় ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রও পাচ্ছেনা এ ভবন তা নিশ্চিত করেন আবু মুহাম্মদ সাজেদুল কবির জোয়ারদার ।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ওই ভবনের কিছু লোক আমার কাছে এসেছিলো। আমি তাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার কথা বলি। তবে কাজ ফের চালু করার বিষয়ে লিখিত কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান। এখানে আইন বর্হিভূতভাবে কোন কাজ হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।