বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
সমাজ সংসারে মানুষের জীবনে ব্যস্ততা নিত্যদিনের সংঙ্গী। সেই ব্যস্ততায় আশেপাশের ঘটনাবলি বা সাধারণ বিষয়গুলো যেন আমরা সহসাই পাশ কাটিয়ে চলি। কিন্তু সেই সাধারণ ঘটনাগুলোর একটি আজ ময়মনসিংহ তথা দেশজুড়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। দিকভ্রান্ত একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যাক্তি ফিরে পেয়েছে তার ৪ বছরের হারানো পরিবার।
ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহ টাউনহল টু ঝালকাঠির জেলার মধ্যে। ডিজিটাল প্রচারনা দেশের দুপ্রান্তে থাকা হারানো এক পরিবারের আকুতিকে মিলনমেলায় পরিনত করেছে। ফিরিয়ে দিয়েছে এক ব্যাক্তির নাম পরিচয় ও পরিবার।
যেভাবে ঘটেছে ঘটনাটিঃ ফিরে দেখাঃ-
২২ ফেব্রুয়ারি যমুনা টিভির ময়মনসিংহ ব্যুরো চিফ হোসাইন শাহীদ ও ওবায়দুল এর ট্যাটাসঃ
২৩ ফেব্রুয়ারি ট্যাটাসঃ
“স্রষ্টার লিলা বোঝা দায়…..
দুপুরের দিকে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি ফোন। রিসিভ করার পর একজন বললেন আমি ঝালকাঠি সদর থানা থেকে বলছি। আপনারা যেই পাগলটিকে পাল্টে দিয়েছেন তার নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। মোবাইলে ছবি দেখে তার মামা আমাদের কাছে এসেছেন। খুশিতে আমার অবস্থা কি বোঝাতে পারবোনা। পুলিশের তৎপরতায় পাগলটির পরিচয় ও ঠিকানা পাওয়া গেলো। তার নাম সোহেল। তিন বছর আগে চট্রগ্রাম থেকে তিনি হারিয়েযান। তখনই তার কিছুটা মানুষিক সমস্যা দেখাদিয়েছিলো। তার পরিবার এখনো তাকে খুজছে। সেসময় থানায় জিডিও করা হয়েছিলো। কিছুক্ষন আগে তার বোন ফোনে তার সাথে কথা বলেছে।
সব ঠিকঠাক থাকলে কাল ময়মনসিংহে তার পরিবার পৌছেযাবে। তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে তার পরিবারের কাছে। আল্লাহ তুমি মহান………”
ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন এর ট্যাটাস ঃ
“পুলিশ ও সাংবাদিকের প্রচেষ্টায় রাস্তায় থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিফিরে পেল তার পরিচয় ও পরিবার।
গত ২১ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের টাউন হল মোড়ে একটি চায়ের দোকানে ২ নং পুলিশ ফাঁড়ির এস,আই, দেবাশীষ সাহা ও যমুনা টেলিভিশন ময়মনসিংহ ব্যুরো চিফ হোসাইন শাহীদ মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়,
যার মাথার চুল জট পাকানো, মুখে লম্বা দাড়ি আর গায়ে ময়লাযুক্ত ছেঁড়া কাপড়। লোকটি হাত বাড়ায় তাদের দিকে। আর তখন তাকে খাবার কিনে দেন তারা। পাশে বসেই খাচ্ছিলো সে।
এ সময় পাগলটিকে নিয়ে এক পরিকল্পনা করেন তারা দুইজন। উদ্দেশ্য বছরের পর বছর রাস্তায় পড়ে থাকা পাগলটিকে খানিক সহযোগিতা করা। ভাবনা মোতাবেক তাৎক্ষণিকভাবে তাকে পাশের এক সেলুনে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে লম্বা আর এলোমেলো চুল দাঁড়ি কাটানো হয়। এসব কাণ্ড দেখে সেখানে জমতে থাকে আশপাশের উৎসুক জনতা।
পরে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গোসল করানো হয় । এরই মধ্যে নতুন পোশাক কিনে আনলেন এস,আই, দেবাশীষ। পরানো হলো নতুন পোশাক। শীতের কাপড়ের দোকান বন্ধ ততক্ষণে। সাংবাদিক হোসাইন শাহীদ তার গায়ের ব্লেজারটি পরিয়ে দিলেন পাগলকে। সেই মুহূর্তে তার হাতে বড় ধরনের একটি ক্ষত দেখতে পান তারা। দেখা যায়, হাতে থাকা একটি আংটি আঙ্গুলের মাংস ভেদ করে ভেতরে ঢুকে আছে আর সেই অংশটিতে পচনও ধরেছে।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক হোসাইন শাহীদ কথা বলেন তার এক চিকিৎসক বন্ধুর সাথে। ডাক্তারের পরামর্শে সাথে সাথে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রাত তখন সাড়ে দশটা।
এগিয়ে আসেন ডাক্তাররাও। রাতেই হয় হাতের অস্ত্রোপচার । ম,চি,ম,হা’র সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ মোহাম্মদ আরিফ ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ সৈয়দ হাসান আকাশ অস্ত্রোপচার করেন। এরপর চিকিৎসকরাই ওষুধসহ তার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে, এর মাঝে ঐ মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির বড় বোন দেখে তার ভাইকে চিন্তে পারেন
এবং আজ ঐ মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে জনাব মোঃশাহ আবিদ হোসেন বিপিএম (বার) পুলিশ সুপার, ময়মনসিংহ, মহোদয় তার পরিবারের নিকট তাকে হস্থান্তর করেন।”
আমরা চলতি পথে আমাদের চারপাশের অতি সাধারণ বিষয়গুলোকে একটু সচেতন ও মানবিক দৃষ্টিতে দেখলে এভাবেই পাল্টে যেতে পারে সমাজ জীবন। ধন্যবাদ সাংবাদিক হোসাইন শাহীদ ও এসআই দেবাশীষ সাহা। আপনাদের এমন মানবিক মূল্যবোধ মানুষেকে আপ্লুত করেছে সেইসাথে সচেতন করতে উদ্ভুদ্ধ করবে।