বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
১২ দিনের শিশুকে বুকের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে ১৮ বছরের কিশোর করে তুলেছেন এক হতভাগা মা। নিজের ওদরে না ধরলেও বোনের সন্তানকে দত্তক নিয়ে উজার করা ভালোবাসায় তাকে ঘিরে স্বপ্ন বুনেছেন। এই সন্তাকে ঘিরেই ছিলো মমতাজ বেগমের সাকুল্যে জীবন। এক নিমিশে নিস্বেষ হয়ে যাওয়া সে স্বপ্নে আজ শুধু আহাজারি। ঘাতকরা নির্মমভাবে কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে সেই মায়ের লালিত স্বপ্ন বুকের ধন হাসনকে।
ময়মনসিংহ গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের লক্ষীপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের আকাশ বাসাত আজ ভারী হয়ে উঠেছে সন্তানহারা মা মমতাজের আহাজারিতে। ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিটে বাড়ির ২ শ গজ দুরে নির্জন পুকুরপাড়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় হাসানকে। হাসানের চিৎকার শুনে ছুটে যান মা মমতাজ বেগম। ততখনে শেষরক্ষা হয়নি হাসানের। মায়ের কুলেই লুটিয়ে পড়ে হাসান। মমতাজ বেগম যাকেই দেখছেন শুধু একই প্রলাপ “হাসন বাবা আইছ, আমার হাসানরে দেও, আমার হাসান”। অহেতুক নির্মম এ হত্যাকান্ডে হতবাক গ্রামবাসীর একটিই জিজ্ঞেসা কেন এ হত্যাকান্ড? ছেলে হারা মায়ের আর্তনাদে লুকিয়ে কাঁদেন প্রতিবেশীরা।
অতিশয় নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবার মমতাজ বেগবের। সংসার জীবনে নিজের সন্তান ধারনের অক্ষমতাকে মমতাজ বেগম পুরোন করেছিলেন সহোদর বোনের সন্তানকে দত্তক নিয়ে। কাঠ কেটে, মজুরি খেটে সন্তানের জন্য যা প্রয়োজন তা করেছেন হাসানের পালিত মা বাবা। সেই বুকের ধনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছে মা মমতাজ বেগম। তার হাতের উপর রক্তাক্ত সন্তান হাসান শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেছে। চিৎকার করে বলেছে মা বাঁচাও, মা বিপুল। মায়ের হাত শক্ত করে ধরে নিজের হাত উচিয়ে পাঁচ অঙ্গুল দেখিয়ে গেছে কিশোর হাসান। সাংবাদিকদের হাসান হত্যাকান্ডের ঘটনা বর্ননা দিতে গিয়ে এসব কথা বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন মমতাজ বেগম।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে অধিকতর তদন্তের ভার পড়েছে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশের উপর। ইতিমধ্যে ডিবি পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার একমাত্র নাম বিপুলকে গ্রেফতার করেছে। জানা গেছে হত্যাকান্ডের আগে হাসানের বাড়ির কাছে একটি চায়ের দোকানে বহিরাগত দুজন যুবককে নিয়ে বিপুলকে (২২) অবস্থান করতে দেখেছে এলাকাবাসী। বিপুল কেওয়াটখালি এলাকায় শ্রমিকের কাজ করে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নিহত হাসান অতিশয় ভদ্র প্রকৃতির ছেলে ছিলো। সে রাজ যোগালির কাজ করতো। কারো সাথে তার বিরোধ ছিলো না। হত্যাকান্ডের ৫ দিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ডিবি পুলিশ ঘাতক বিপুলকে ঢাকা মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে। বিপুল হত্যায় জড়িত থাকার কথাস্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।