বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের কর্মী সাদিকুল বারী আগুনকে তুলে নিয়ে হাতুরিপেটাসহ বেধড়ক মারপিটের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে তাৎক্ষনিক একটি ভিডিও ধারণ করে জড়িত সন্ত্রাসীরা। যে ভিডিওতে আগুনকে ছিনতাইকারী হিসাবে তার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়। তবে ভিডিওটি দেখলে যেকেউ বুঝতে পারবে আহত আগুনের এ স্বীকারোক্তি কতটা চাপের মুখে প্রাণ সংশয়ে দেয়া।
পাশবিক নির্যাতনের শিকার আগুনের চোখ মুখ দিয়ে যখন রক্ত ঝড়ছে উপস্থিত সন্ত্রাসীরা তখন কৌশলগত ভিডিও নিতে আগুনকে ছিনতাইকারী আখ্য দিচ্ছে। নির্মম এমন একটি ভিডিও চিত্র ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমের হাতে এসেছে আগুন হত্যা চেষ্টা মামলার সূত্র ধরে। প্রশ্ন উঠেছে রক্তাক্ত আগুনের ওই ভিডিওটি ধারণ করেছে কে? কোথায় করা হয়েছে ওই ভিডিও? তুলে নেয়া সন্ত্রাসীরা করেছে নাকি অন্যকেউ? ভিডিওটি স্থির চিত্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে কারা? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলেই বেরিয়ে আসবে এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ডার কে?
এ বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগ কর্মী আগুনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তিনি জানান, সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে তাৎক্ষনিক নিজেকে বাচাতে “আমি শুধু তাদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে গেছি। তারা আমাকে বলেছে কোন উল্টাপাল্টা কথা বললে নুর উদ্দীনের হাতে তুলে দিবে। সে আমার হাত পা কেটে বডি গায়েব করে দিবে।”
মামলার বাদী আব্দুল বারী বাদল জানান, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আসিফ হোসেন ডনের ভাতিজা আবীরের সাথে পূর্ব বিতন্ডার জেরে মঙ্গলবার ১১ জানুয়ারি বিকেল পাচটায় ইয়াসিন আরাফাত শাওন দলবল নিয়ে আগুনকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে নগরীর সেহড়া ডিবি রোডের রাকিব এর রিক্সা গ্যারেজে নিয়ে হাতুড়িপেটাসহ বর্বরোচিত নির্যাতন চালায়। ধাড়ালো অস্ত্রদিয়ে আগুনের চোখে মুখে উপর্যপুরি ঘাই দেয়। পিস্তলের বাট দিয়ে আগুনের চোখে আঘাত করে মারাত্বক জখম করে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আগুনের কোমড়ে গুরুতর আহত করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনায় ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের বহিস্কৃত সদস্য ইয়াসিন আরাফাত শাওন (২৯) পিতাঃ এ কে এম ইদ্রিস আলী, জনি মিয়া(২৮) পিতাঃ মামুন ওরফে ঢাকাইয়া মামুন, সহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে আসামি করে আগুনের বাবা মো: আব্দুল বারী বাদলের অভিযোগে ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার মামলা নেয় কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। মামলা নং ৩১, তারিখ ১৩ জানুয়ারি।
মামলার বাদী আব্দুল বারী বাদল বলেন, ইয়াসিন আরাফাত শাওন একজন চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী। সে আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্রের মুখে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করেছে। এসব নির্যাতন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হুমকির মুখে ছিনতাইকারী সাজাতে আমার ছেলের স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করেছে। যার সত্যতা অধিকতর তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, অস্ত্র ও মাদক কারবারী শাওন কাদের ছত্রছায়ায় এসব কর্মকান্ড করছে ময়মনসিংহবাসীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানেন বলে আমি মনে করি। তারা শাওনকে আইনের হাত থেকে বাচাতে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি এ পৈশাচিক নির্যাতনে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজীসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে শাওনের নামে। ২০২০ সালের ৯ মে বিপুল পরিমান মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ ইয়াসিন আরাফাত শাওন ও তার ৬ সহযোগীকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৪। এ ঘটনায় মহানগর যুবলীগের সদস্যপদ থেকে তাকে বহিস্কার করে যুবলীগ।