বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কৌশলী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলীয় মনোনয়ন একজনকে দিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি নমনীয় হাইকমান্ড। এ সুযোগে সংগঠনের ভিতরে বাইরে সুপ্ত বিভেদরেখা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নৌকার প্রার্থীকে কোনঠাসা করতে সংগঠনের ভাইটাল পদধারী অনেক নেতা সরাসরি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার আগেই প্রচারে নেমেছেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে উল্লাসভরে ফুলেল শুভেচ্ছায় সভা করে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীম।
ময়মনসিংহ সদরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা নৌকার পক্ষে কাজ করলেও ছাত্রলীগ, যুবলীগ,জেলা যুবমহিলা লীগ, কৃষকলীগের গুরুপূর্ণ পদধারী বেশ কয়েকজন নেতা সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। গ্রুপিং হাওয়ায় গাঁ ভাসিয়ে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিতিমত আক্রমনাত্বক বক্তব্য দিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। এমনকি নৌকার প্রার্থীকে ক্ষিপ্ত করতে তার নিজ ওয়ার্ডে মঞ্চ করে মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে উসকানিমূলক আচরণ করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি সাধারণ জনগণ ও ভোটারদের কাছে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
আসনটিতে এখন পর্যন্ত মোট ১২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছে। এখানে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী না থাকলেও বিএনপির সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন খান দুলু নির্বাচন করছেন। মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু মো: মূসা সরকার। তার বাড়ি ২৭ নং ওয়ার্ডের আকুয়া মড়লবাড়ি। এছাড়াও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাসদের প্রার্থী এড. নজরুল ইসলাম চুন্নু, জাকের পার্টির কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ কংগ্রেস আব্দুল মান্নান, তৃণমূল বিএনপির-দীপক চন্দ্র গুপ্ত, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ পরেশ চন্দ্র মোদক, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন বিশ্বজিৎ ভাদুড়ী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোঃ হামিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সেলিম খান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মোহিত উর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আমিনুল হক।
ময়মনসিংহ সদর আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত। পিতার জনপ্রিয়তা, দলের প্রতি ত্যাগ তিতিক্ষায় অবদান রাখায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এবার প্রয়াত পিতার আসনে পুত্রকে মনোনয়ন দিয়েছেন। মোহিত উর রহমান শান্ত ছাত্রজীবন থেকেই পিতার পদাংক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। দলের দুঃসময়ে ছাত্রলীগের হাল ধরেছেন সাহসী হাতে। পিতার সাথে দুইবার জেল খেটেছেন ১৭ মাস। ২০১৬ সালে প্রথমবার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপান। ২০২৩ সালে দ্বিতীয়বার একইপদে আসিন হন। তিনি ক্রীড়াসংগঠক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন দীপু সায়েম ক্রীড়াচক্রের মধ্যদিয়ে।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, নির্বাচন করতে নয়, নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেয়াই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মূল টার্গেট। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের কমিটিতে আসার পর থেকে উপজেলা নির্বাচন, পৌর মেয়র নির্বাচনে এই স্বতন্ত্র প্রার্থী নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহীর পক্ষে কাজ করেছেন। সে ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বলে অভিজ্ঞ মহলের দাবি।
ময়মনসিংহ -৪ সদর ও ত্রিশাল-৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ব্যাবসায়ী আমিনুল হক শামীম। তিনি সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ইকরামুল হক টিটু বড়ভাই। সূত্রমতে, আমিনুল হক শামীমের বিরুদ্ধে ছাত্রদল, যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার খবর হলেও ২০১৬ সালে প্রথমবার, ২০২৩ সালে দ্বিতীয়বার জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সহ সভাপতির পদধারী হলে অনুপ্রবেশের সমালোচনা থেমে যায়। তবে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে উল্লাসভরে ফুলেল শুভেচ্ছায় সভা করে আবারও সমালোচনার ঝড় তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীম।
১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার টাউনহল তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামের নারী সমাবেশের নামে জেলা যুবমহিলা লীগ যুগ্ম আহবায়ক স্বপ্না খন্দকারের আয়োজনে ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আমিনুল হক শামীম।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের মর্মন্তুদ দিন। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণার দিনকে ম্লান করে ফুলেল শুভেচ্ছা আর উল্লাসভরে আরম্ভর অনুষ্ঠানে মেতে ভোট চেয়েছেন ময়মনসিংহ সদর আসনের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক শামীম। ঘটনাটি ময়মনসিংহের সচেতন নাগরীকসহ সর্বস্থরের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেছে বলে মন্তব্য এসেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হয়েও তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে দিনে উল্লাসভরে সভা করায় ব্যাপক সমালোচনা চলছে। প্রশ্ন উঠেছে রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের চেতনা তিনি কতটা ধারন করতে পেরেছেন মুক্তিযুদ্ধের বাহক সংগঠন আওয়ামী লীগে যোগদান করে।