বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার আড়াই হাজার টাকা ঈদের পূর্বে না পাওয়ার উপক্রম হয়েছে হালুয়াঘাট ১০ নং ধুরাইল ইউনিয়নের উপকারভোগীদের। উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার চেয়ারম্যানের দেয়া তালিকা সংশোধন করলেও রয়ে গেছে বিস্তর গড়মিল ও অনিয়ম। দুটি মোবাইল নম্বরের বিপরীতে ৫৪ জনের নাম থাকায় তালিকা সংশোধন করা হলেও ফের ১২ বার ওঠানো হয়েছে তিনটি নম্বর। নম্বরগুলো ওই চেয়ারম্যানের সহোদর ভাই ও মামাতো ভাই কাম ব্যাক্তিগত সহকারীর বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় ১০ নং ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ওয়ারিছ উদ্দিন সুমনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকসহ উর্ধতন কতৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগ আহবায়ক প্রভাষক মোঃ জসিম উদ্দিন তালুকদার।
অভিযোগে জানা যায়, গত ১০ মে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অর্থ সহায়তার আওতায় ১০ নং ধুরাইল ইউনিয়নে ৪৬০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে হালুয়াঘাট উপজেলা প্রশাসন। এতে চেয়ারম্যানের মামাতো ভাই আব্দুর রহিমের ব্যবহৃত মোবাইল ০১৯৭৩০৪৯৭৯৭ ও ০১৭২৩৪০৯৭৯৭ নম্বর দুটি ৫৪ বার ওঠানো হয়। এছাড়াও তালিকায় আরও বেশকয়েটি নম্বর একাধিকবার অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
এঘটনায় এলাকাবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা মূখর হয়ে উঠলে গত ১৪ মে তা সংশোধন করে পূনরায় নতুন তালিকা প্রকাশ করে উপজেলা প্রশাসন। সংশোধিত সেই তালিকায়ও একই রকম অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। যা নিয়ে জেলাব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
সংশোধিত তালিকায় চেয়ারম্যানের সহোদর ভাই মোঃ শফিক উদ্দিন রিপনের ৩টি নম্বর যথাক্রমে ০১৭৩৯১৫৯২৮৪, ০১৬৪৩৮৫২০৪০, ০১৮২১২৭৪৪৪৫ এর বিপরীতে ১২ জনের নাম রয়েছে। মামাতো ভাই আব্দুর রহিমের ০১৯৭৩০৪৯৭৯৭ নম্বর ওঠানো হয়েছে ৩ বার। রয়েছে রহিমের স্ত্রী হালিমা খাতুনের নামও। একাধিকবার ব্যবহৃত প্রতিটি নম্বরের প্রেক্ষিতে উপকারভোগীর নাম ও ঠিকানা স্থানীয় জনগনের হলেও তারা এই বিষয়ে অবগত নন বলে সূত্র জানায়।
নগদ অর্থ পাওয়ার তালিকায় রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষের নাম থাকার নির্দেশনা থাকলেও স্বজনপ্রীতি, দুস্থদের পরিবর্তে বিত্তশালীদের নাম তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে বলে এ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে । ফলে কর্মহীন দুস্থ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার থেকে বঞ্চিতের উপক্রম হয়েছে এখানে।
১০নং ধুরাইল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ ফারুক মিয়া অভিযোগ করে বলেন, প্রকাশিত তালিকার ১২৩নং ক্রমিকে তার নাম ও পিতার নাম ঠিক থাকলেও মোবাইল নম্বর দেয়া আছে অন্যকারো। তার নাম তালিকায় আছে তিনি সেটিও জানতেন না। সম্প্রতি তিনি বিষয়টি জেনে হতবাক।
এ প্রসঙ্গে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজাউল করিম বলেন, ১০ নং ধুরাইল ইউনিয়নের তালিকায় কিছু ভূল ত্রুটি যাচাই বাছাইয়ে ধরা পড়েছে। এ ঘটনায় ট্যাগ অফিসার ও ইউপি চেয়ারম্যানকে শোকজ করা হয়েছে। গত ১৪ মে তালিকাটি সংশোধন করা হয়েছে।
সংশোধিত তালিকায় চেয়ারম্যানের পরিবারের কারও নাম বা নম্বর আছে কিনা তা জানা নেই জানিয়ে ইউএনও বলেন,যদি থেকে থাকে তারা পাবে না। তালিকাগুলো অতি অল্প সময়ে প্রনয়ণ করার কারণে কিছু ভূল ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। যাচাই বাছাই পূর্বক ঈদের পূর্বে তালিকা দেয়া গেলে উপকারভোগীরা অর্থ সহায়তা পাবে নয়তো ঈদের পরে পাবে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ারিছ উদ্দিন সুমন বলেন, তালিকাটি অতি দ্রুত প্রণয়ন করায় কিছু ভূল ত্রুটি হয়েছে যা সংশোধন করা হয়েছে। আমার পরিবারের কারও নাম বা মোবাইল নম্বর তালিকায় থাকলে তা আমার জানা নেই। একটি পক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চক্রান্ত করছে।
নগদ অর্থ সহায়তা কার্যক্রমে উপকারভোগীদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে ইউনিয়ন যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ। তারা বলেন, সুবিধাভোগীর নামের পাশে যারা নিজের মোবাইল নম্বরটি জুড়ে দিয়ে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে তারা প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে।