বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছের পক্ষে জয়ের ডামাডোল বাজছে অতীতের চেনা সুরেই। ভোটার অবস্থান আর টাকার তোড়ে এখানে অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের নৌকা। ভোটযুদ্ধে এপার ওপার হিসাব নিকাশ জোরদার রয়েছে প্রার্থীর অবস্থান সমীকরণে। বিগত নির্বাচনের মতো এবারও দলীয় সিদ্ধান্ত এখানে উপেক্ষিত হতে চলেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে । ব্যাক্তি স্বার্থে দলের সিদ্ধান্তকে পাত্তা না দেয়ার নজির যেখানে চলমান রাজনীতি হিসাবে চিহ্নিত।
জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত ত্রিশাল পৌরসভার আয়তন ৫.৪৯ বর্গ কি.মি.। ৯ টি ওয়ার্ড নিয়ে ১৯৯৮ সালে
প্রতিষ্ঠিত হয় ত্রিশাল পৌরসভা। ২০১২ সালে ত্রিশাল পৌরসভাকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে
১ম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর টানা দুইবার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া আব্দুর রশীদ চেয়ারম্যান। তার মৃত্যুর পর মেয়র নির্বাচিত হন উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছ। এর মধ্যে একবার দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করলেও পরের বার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন তিনি।
ত্রিশাল পৌরসভা ভৌগলিক আঞ্চলিকতায় ত্রিশাল ও রামপুর দুভাগে বিভক্ত। এখানে দলীয় সিদ্ধান্তের চেয়ে আঞ্চলিকতার প্রভাব অনেক প্রকোট ভোটার ও স্থানীয় নেতারাদের কাছে। বর্তমান ত্রিশাল পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ১৪টি ভোটকেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। এর মধ্যে ত্রিশাল এলাকায় ৮টি কেন্দ্রে মোট ভোটার প্রায় ১৬ হাজার অপরদিকে রামপুর অংশে ৬টি কেন্দ্রে মোট ভোটার প্রায় ১২ হাজার। চার হাজার ভোটে এগিয়ে ত্রিশাল অংশের প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে বর্তমান মেয়রের ভোট ব্যাংক ও টাকার কাছে নৌকা পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বলেই মনে করে রাজনৈতিক সচেতন মহল।
ত্রিশাল পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ সরকার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেও সতন্ত্রের খোলসে দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান আনিছ। তিনি নিশ্চিত জয়ের দ্বম্ভে দলীয় মনোনয়নই চাননি বলে গুঞ্জন রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের কোন সংগঠনের পদে না থাকলেও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ।
ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থন, আভ্যন্তরীন কোন্দল আর বর্তমান মেয়রের টাকার কাছে নৌকা জয়ী হবার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পৌরসভা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনবারই মেয়র পদে বিজয়ী হতে পারেনি রামপুর অংশের প্রার্থীরা। ত্রিশাল অংশে হেভিওয়েট একাধিক প্রার্থী থাকলেও রামপুর অংশ থেকে ভোট নিয়েই বিজয়ী হন ত্রিশাল অংশের প্রার্থীরা। গত নির্বাচনে রামপুর আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জুয়েল সরকার স্থানীয় প্রভাবে ও নিজেদের ভোটারদের হিসেবে এগিয়ে থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অধিকাংশই বিদ্রোহী প্রার্থী আনিছের পক্ষে অবস্থান করায় শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
ফাইল ফটোঃ গত ত্রিশাল উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভা। এফবি থেকে সংগ্রহীত
দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান। ভোটার জনপ্রিয়তার নামে টাকা আর ক্যাডার বাহিনীর দম্ভে ভাসছেন বর্তমান মেয়র আনিছ। মেয়রের প্রভাব বিস্তার করে লাভজনক ব্যবসায় অংশীদার হয়ে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে সমালোচনা রয়েছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ সরকার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেরাচ্ছেন। তবে খবর রয়েছে নৌকার প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিলেও গোপনে জগ মার্কার পক্ষে কাজ করছে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। ময়মনসিংহ নগরীর জেলা স্কুল মোড়ে মেয়র আনিছের বহুতল ভবনে যাদের নিয়ে গোপন মিটিং চলে বলে সূত্র জানায়।
ত্রিশাল উপজেলায় দল নয়, ব্যাক্তির পক্ষে ওপেন নির্বাচনী সভা করে বিদ্রোহী প্রার্থীকে জয়ী করার সমালোচনার রেকর্ড রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে । গত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মতিন সরকারকে ময়মনসিংহ জেলার পদধারী নেতারা ওপেন মিটিং করে জয়ী করেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পৌর নির্বাচনেও একই ঘটনার ঘটে। তবে এবার আনিছের পক্ষে ওই নেতারা ওপেন না থাকলেও গোপনে তার হয়ে কাজ করেন বলে সূত্র জানায়।